লালমনিরহাটের অটো (মিশুক) চালককে অপহরণ পূর্বক খুন করে অটো মিশুক ছিনতাই ও আলামত গোপনের অপরাধে আদিতমারী থানা পুলিশের অভিযানে আলামত উদ্ধার ও আসামী গ্রেফতার সংক্রান্ত লালমনিরহাট জেলা পুলিশের প্রেস ব্রিফিং অনুষ্ঠিত হয়েছে।
রোববার (২৭ আগস্ট) দুপুর ১২টা ৩০মিনিটে লালমনিরহাট জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে লালমনিরহাট জেলা পুলিশ এ প্রেস ব্রিফিংয়ে এমনটিই জানিয়েছেন লালমনিরহাট পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম।
এ সময় লালমনিরহাটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মোহাম্মদ আতিকুল হক, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস) মোঃ আলমগীর রহমান, আদিতমারী থানার অফিসার ইনচার্জ মোজাম্মেল হক, ওসি (তদন্ত) রফিকসহ অন্যান্য উর্দ্ধতন কর্মকর্তাবৃন্দ ও লালমনিরহাটের কর্মরত সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
লালমনিরহাট পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম পাঠকৃর্ত প্রেস রিলিজ সূত্রে জানা গেছে, প্রতি দিনের ন্যায় গত ২০/০৮/২০১৩ ইং তারিখ রাত অনুমান ০৯.০০ ঘটিকার সময় ভিকটিম আঃ রাশিদ ভাড়া খাটার জন্য অটো মিশুক নিয়ে বাড়ী হতে বের হয়। পরে আর ফিরে না আসায় সব জায়গায় খুঁজাখুঁজি করে না পাওয়ায় পুলিশ কে বিষয়টি অবগত করে। তারপর ২১/০৮/২০১৩ ইং তারিখ সকাল অনুমান ১০.৩০ ঘটিকার সময় জনৈক ব্যক্তি বাদীর ভাতিজা মোঃ লোকমান হাকিমের মোবাইল ফোনে জানায় সারপুকুর কান্তেশ্বর পাড়া বাবুর বাজারের পশ্চিম পার্শ্বে ডাকাত পাড়া সাদা ব্রীজের (কান্তেশ্বর) মাঝামাঝি স্থানে রক্ত লেগে আছে পাশে সেন্ডেল ও একটি লাল কাপড়ের অংশ বিশেষ ব্রীজের উপর পড়ে আছে। উক্ত সংবাদ পাওয়ার পর বাদী তার ছেলে ও ভাতিজা এবং এলাকার লোকজন সহ আদিতমারী থানা পুলিশের সহায়তায় উক্ত ব্রীজের উপর পৌঁছে ব্রীজের উপর লেগে থাকা রক্ত, একটি লাল কাপড়ের অংশ ও পাশে পড়ে থাকা সেন্ডেল দেখে উক্ত সেন্ডেল বাদী তাহার ভাইয়ের বলে সনাক্ত করে। আদিতমারী থানা পুলিশ বাদী সহ উপস্থিত লোকজনের মাধ্যমে ভিকটিম আঃ রাশিদকে ব্রীজের নিচে প্রবাহমান ভেটেশ্বর নদীতে তল্লাশী করে উক্ত ব্রীজ হতে অনুমান ৩০ ফিট দক্ষিনে পানিতে নিমজ্জিত অবস্থায় প্রাপ্ত ভিকটিম আঃ রাশিদ এর মৃত দেহ উদ্ধার করে ব্রীজের পূর্ব পার্শ্বে পাকা রাস্তার উপর নিয়ে আসা হয়। আদিতমারী থানা পুলিশ ভিকটিম আঃ রাশিদ এর মৃতদেহের সুরতহাল রিপোর্ট উপস্থিত লোকজনের সামনে প্রস্তুত করে ময়না তদন্তের জন্য লাশ লালমনিরহাট সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরন করে। ময়না তদন্তকালে মৃত আঃ রাশিদের মাথার পিছনে ভারী বস্তু দ্বারা দুইটি আঘাতের চিহ্ন পরিলক্ষিত হয়। উক্ত ঘটনা সংক্রান্তে ভিকটিমের ভাই বাদী হয়ে এজাহার দায়ের করলে আদিতমারী থানার মামলা নং-১৫, তারিখ-২১/০৮/২০১৩ খ্রিঃ, ধারা- ৩৬৫/৩০২/৩৭৯/২০১/৩৪ পেনাল কোড ১৮৬০ রুজু করা হয়। গত ২১/০৮/২০২৩ খ্রিঃ তারিখে তথ্য প্রযুক্তি এবং গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ঘটনার সাথে জড়িত আসামী মোঃ সামছুল হক বাবু কে গ্রেফতারের উদ্দেশ্যে আসামীর বাড়ী খারুভাঁজ এলাকায় রাত্রি বেলায় অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযান কালে আসামী সামছুল হক বাবুর মা মোছাঃ সালেহা বেগমকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা যায় যে উক্ত আসামী ঘটনার পরপরই ঢাকায় পলাতক হয়েছে। পরবর্তীতে সোর্সের দেওয়া তথ্য মতে লালমনিরহাট থানাধীন মোস্তফির বাজারে সততা ভাংড়ীর দোকানে ছিনতাই করা মিশুকটি বিক্রয়ের চেষ্টা করে মর্মে জানা যায়। আদিতমারী থানা পুলিশ উক্ত স্থানে উপস্থিত হয়ে সংগৃহীত সিসিটিভির ভিডিও ফুটেজ ও সিডিআর পর্যালোচনার প্রেক্ষিতে জড়িত আসামীদের দ্রুত গ্রেফতারের লক্ষে মামলার আইও সহ আদিতমারী থানার একটি আভিযানিক দল ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা করে। আসামীরা দ্রুত তাদের অবস্থান পরিবর্তন করার কারনে একই সাথে র্যাব-১৩ মাধ্যমে র্যাব-১১ এর নরসিংদী র্যাব ক্যাম্পের সহায়তা চাওয়া হয়। আদিতমারী থানার আভিযানিক দলটি সার্বক্ষনিক র্যাবের সাথে যোগাযোগ রেখে র্যাবের সহায়তায় ইং- ২৩/০৮/২০২৩ তারিখ সন্ধ্যা অনুমান ১৯.০০ ঘটিকার সময় গাজীপুর কোনাবাড়ী এলাকা হইতে আসামী ১। মোঃ সিরাজুল ইসলাম (১৯), পিতা-মোঃ মমিনুল ইসলাম, মাতা-মোছাঃ ময়না কোম ২। সামছুল হক (২) বাবু (৩২), পিতা-মৃত মোস্তাজ আলী @ মোন্তাজ ডাকাত, মাতা- মোছাঃ ছালেহা কোম, ৩। মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান মুন্না (২০), পিতা-মোঃ আব্দুল মতিন, মাতা মোছাঃ গোলাপী বেগম, ৪। মোমিনুল ইসলাম (৪৫), পিতা-মোঃ নাজিম উদ্দিন, মাতা-মোছাঃ আমেনা বেগম সর্ব সাং- থারুভার ৩ নং ওয়ার্ড, উপজেলা / থানা- আদিতমারী, জেলা- লালমনিরহাটদের গ্রেফতার করা হয়।
আসামীদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ঘটনার দিন তাং-২০/০৮/২৩ খ্রিঃ বিকাল ০৫.০০ ঘটিকায় খারুভাজ স্কুল মাঠে ১-৩ নং আসামীরা অটো ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করে। সেই পরিকল্পনা মোতাবেক আসামী সিরাজুল ইসলাম মিলন বাজার ভাংরির দোকান হতে একটি লোহার রড কিনে ঘটনাস্থল কান্তেশ্বর পাড়া সাদা ব্রিজের উপর শুকাতে দেওয়া কাশখড়ের নিচে লুকিয়ে রেখে আদিতমারী বুড়ির বাজারে আসে। সেখানে থেকে একটি অটো মিশুক বাবুর বাজারে যাবে মর্মে ভাড়া করে। ঐ দিন রাত অনুমান ১১.৪০ টার পর ১ হতে ৩ নং আসামীরা ভিকটিমকে নিয়ে ঘটনাস্থল কান্তেশ্বর পাড়া সাদা ব্রীজের উপরে পৌঁছালে আসামীরা অটো চালক (ভিকটিম)-কে উক্ত ব্রীজের উপরে তাদেরকে নামিয়ে দিতে বলে। অটো চালক থামালে আসামী সামছুল হক বাবু ভাংতি নাই মর্মে কৌশলে ৮০/- টাকা ভাড়া দেওয়ার জন্য ১০০/- টাকার একটি নোট অটো চালকের ডান হাতে দেয়। অটো চালক ২০/- টাকা ভাংতি দেওয়ার উদ্দেশ্যে শার্টের পকেট থেকে পকেটের সমস্ত টাকা বের করার সময় আসামী সামছুল হক বাবু তার বাম হাত দিয়ে অটো চালকের হাতে থাকা টাকা থাবা দিনো ছিনিয়ে নেয়। উক্ত সময়ে আসামী মুন্না ও বাবুর সাথে অটো মিশুক চালকের ধস্তাধস্তি শুরু হয়। ঐ সময় সিরাজুল ইসলাম পূর্বেই ব্রীজের উপরে খড়ের নিচে লুকিয়ে রাখা লোহার রড বাহির করে এনে ভিকটিমের মাথায় পিছন দিক দিয়ে পরপর দুইটি স্বজোড়ে আঘাত করে। ফলে অটো মিশুক চালক নিস্তেজ হয়ে পড়ে ও তার মাথা দিয়ে রক্ত বের হতে থাকে। এ সময় রাস্তা দিয়ে অন্য একটি গাড়ী আমার আলো দেখতে পেয়ে তিনজন মিলে উক্ত অটো মিশুক চালককে ব্রিজ থেকে ভেটেশ্বর নদীর পানিতে লাশ গোপন করার উদ্দেশ্যে ফেলে দেয়। আসামী মোস্তাফিজুর রহমান মুন্না লোহার রড টি ডক ভোটেশ্বর নদীতে ফেলে দেয়। এরপর আসামীরা ভিকটিমের নিকট থাকা ৭৩০/- টাকা ও ভিকটিমের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন সহ চোরাই অটো মিশুক নিয়ে সাপ্টিবাড়ী দিয়ে লালমনিরহাট মিশন মোড় হয়ে মোকফির দিকে যায়। পরবর্তীরে ২১/০৮/২৩ খ্রিঃ তারিখ সকাল বেলা মোস্তফির একটি ভাংড়ির দোকানে অটো মিশুকটি বিক্রয়ের চেষ্টা করে। বিক্রয়ের চেষ্টা কালে ভাংভিন্ন দোকানদার ও স্থানীয় লোকজন সন্দেহ করলে ১ হতে ৩ নং আসামীরা উক্ত মিশুক গাড়ীটি মোস্তফি বাজারে ফেলে রেখে কৌশলে অন্য একটি অটোতে চড়ে তিস্তা রেল স্টেশন হয়ে ট্রেনে কাউনিয়া রেল স্টেশনে যায়। সেখান থেকে ট্রেনে উঠে সান্তাহার রেল স্টেশনে যায়। সেখানে রাত্রী যাপন শেষে সকালে ঢাকার ট্রেনে উঠে কমলাপুর রেল স্টেশনে যায় নামে। পুনরায় আসামীরা ট্রেনে উঠে নারায়নগঞ্জ যায়। সেখান থেকে আসামী সিরাজুল তার বাবাকে মোবাইল ফোনে ঘটনার বিষয় বিস্তারিত জানালে তার বাবাকে মোমিনুল ইসলাম বিষয়টি কাউকে কিছু না বলার পরামর্শ দিয়া তাহার নিকট আশ্রয় দেওয়ার জন্য ডেকে নেয় এবং আশ্রয় দেয়। পরবর্তীতে র্যাবের সহায়তায় গত ২৩/০৮/২৩ খ্রিঃ সন্ধ্যা অনুমান ১৯.০০ ঘটিকার সময় গাজীপুর কোনাবাড়ী থেকে ৪ নং আসামীর আশ্রয় হতে গ্রেফতার করা হয়। আসামীদেরকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা ঘটনার সাথে জড়িত থাকার বিষয়ে আমাদের নিকট সত্যতা স্বীকার করে। ইতিমধ্যে এজাহারে বর্নিত ছিনতাই করা অটো মিশুক গাড়ীটি মোস্তফি বাজার হতে উদ্ধার মূলে জন্ম করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃত আসামী সামছুল হক বাবুর নিকট হতে ভিকটিমের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন এবং আসামী মোস্তাফিজুর রহমান মুন্নার দেওয়া তথ্য ও তাকে ঘটনাস্থলে হাজির করে তার দেখানো মতে হত্যার ব্যবহৃত লোহার রডটি ভেটেশ্বর নদী হতে উদ্ধার করা হয়েছে। পরবর্তীতে আসামীদের বিজ্ঞ আদালতে হাজির করলে ফৌজদারী কার্যবিধি আইনের ১৬৪ ধারা মোতাবেক বিজ্ঞ আদালতে আসামীরা ঘটনার সাথে জড়িত থাকার বিষয়ে স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি প্রদান করে। বিজ্ঞ আদালত আসামীদের জবানবন্দি গ্রহণ শেষে তাহাদের জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়। মামলাটি তদন্ত অব্যাহত আছে। পরবর্তী তদন্তে ঘটনার বিষয়ে আরো বিস্তারিত প্রকাশ পাইবে।